তারায় পাওয়া
পিয়াস মজিদ

স্বপ্নের ভেতর কত জলাভূমি, দাহপথ।
বিজন স্বপনমহলে নিত্য আসা-যাওয়া
তবু পাইনি অগ্নি
      পাইনি ভেলা
খিড়কি আর সিংহদরোজায় দিনরাত বাঁধা থাকে
শুধু এক রক্তরথ।

এই উড়ন্ত নাও দিগ্বিদিক ঘুরেফিরে থামে যেখানে
তা তো নীলিমার রেশমি সমাধি।
সে সমাধির এককোণে ফুটে আছি ফুল;
বাস্তুচ্যুত, স্বপ্নহীন।

দূর সমুদ্রও ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না
আমার অপজন্মের ঢেউ।




ব্যাধ
তারিক টুকু

কত কিছুই না হারিয়ে ফেলি। এই ধর সবুজ বল্লম, বাইনাকুলার আর শ্বেতাগ্নি টর্চ।

রাতে তাই বেরুতে পারিনা। যদি কেউ চেপে ধরে, মরীচিকা ডাকে!

কেউ বলে-ঐ তো তোমার বল্লম, রাত্রিভর হরিণের পিছু পিছু উড়েছে।
শুনি-ঐ টর্চই তো প্রভাস্বর, কুয়াশায় জেগে উঠে পৃথিবী দেখায়।

কিন্তু এসব জেনে আমি কী করবো। এরা কি কখনও পশু শিকারের কাজে লাগতে পারে।
এরা কি বসন্তে হারিয়ে যেতে শিখেছে, হিম থেকে জন্ম নিতে কিংবা রাত্রি হলে স্মৃতিবিস্মৃতির
চক্রে পশুরক্ত কীভাবে একেকটি গাছে জবাফুল হয়ে জমে ওঠে-পেরেছে কি সেই কথা বুঝে উঠতে!  



নীল

অনিমিখ পাত্র

তোমার পায়ের দিকে চেয়ে
যৌনরোষ এসেছে আবার
এদিকে বসন্তে, কামে ডেকেছে কোকিলও
ঊরুর সকল নিষ্ঠা
ছেড়ে দিচ্ছে সব পথ, পথের
একতারা দোতারা মুদ্রা
হালফিলের সমস্ত বাদাম
গ্রীষ্ম আসন্ন জেনে
ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য
বানানো হয়েছে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা বাড়ি
মানুষের পায়ে পায়ে পরানো হয়েছে
সীমাহারানো ঘুঙুরের শোভন যৌনছায়া
যেন আসে জলের প্রতাপ
আমি নিয়ে বসে আছি নীল আলোর বিষয়আশয়
তোমার পায়ের দিকে চেয়ে
মনে হচ্ছে দেখবো না তোকে




অনুপস্থিতি
মোস্তাক আহমাদ দীন

বাড়ি ঘুরে এসেছি এবার; তোমার বাগানে দেখি
                              পড়ে আছে রক্ত-আভা ফল
কেমন বিষাক্ত হয়ে গেছে দেখি বায়ু-পরিবেশ
এখানে সকলই মিথ্যা, শুধু এই গরহাজিরায় 

ঘরের সকল কিছু-দেশ কাল-তাও ছিল ঠিক
যে-কারও সামান্য মাপে এইটুকু ভালো বোঝা যায়
এমনকি আকাশ পাতালও তার রূপকথাসহ
দিকে দিকে বেজেছিল শুনি-এই কথা প্রমাণিত
                               মানুষের কাছে;
আর সব মিথ্যে হয়ে বাগানের পাশে পড়ে রয়

তোমার বাগানে গিয়ে-তুমি না হলেও
                     আজ-দেখে আসি রক্ত-আভা ফল



পরানদী
শুভাশিস সিনহা

মরার মতোন পানি যে নদীতে নাই
তারই তীরে মৃত্যুলোভী জীবন দাঁড়ানো এক ঠায়

টানটান পায়ের তলায় নাজুক বালির ধ্বস
লজ্জাবতী প্রেমরঙ্গে গোটালো সহসা আপনায়
বটের চুলের জটে দিশাহারা বাতাস গুমড়ায়...

তবু
মরার মতোন পানি এ নদীতে নাই
এখানে নামিলে শুধু বাল্যক্রীড়া, কেলি
বারো ফুট উঁচু রসোচ্ছ্বাস

হস্তে তবু হস্ত বাঁধা, একা কৃষ্ণ, একা রাধা
প্রেম লীন কাহার কায়ায়

মরার মতোন পানি যে নদীতে নাই...



শব্দগুচ্ছ
আহমেদ মুনির

১০
আমার শব্দের ভেতর থেকে
একটা শাদা বেড়াল
সবার অলক্ষ্যে লাফিয়ে উঠে
অন্য কারও শব্দের ভেতর
মিলিয়ে যেতে দেখলাম।

১১
আমার শব্দগুলোকে কার্নিশে
উল্টো করে ঝুলিয়ে দিয়েছে ওরা।
এখন তাদের মুখ-নাক-চোখ বেয়ে
টপ টপ করে ঝরে পড়ছে রক্ত।

১৩
উষ্ণ, অস্ফুট একটা শব্দ
তোমার বুকের ওপর
রেখেছি কাল রাতে।
যখন স্বপ্নে, বরফ কুচিতে
ঢেকে যাচ্ছিল তোমার
সমস্ত শরীর।




শিশিররুপোলি
গৌতম হেঁস

শীর্ণ স্বৈরিণীর মতো পড়ে আছে শ্রাবণ ভাস্কর্য
যা কিছু শুদ্ধতা শুধু জমে আছে পথের ফাটলে
অশ্রু হয়ে, জ্যোৎস্না হয়ে, বোধির ভেতর

দিতি-অদিতির রেণু আপন মনে পুড়তে পুড়তে
অগ্নিদেবতার নীরব খড়্গবিষাণের মধ্যে দিয়ে চলে যায়

'অঙ্কুরের মধ্যে দগ্ধ এই জীবন'- যেই বলতে গিয়েছি
কুরচি আর কুঁড়োজালির আকাশ পেরিয়ে
ঊষাভোর ঘাই মারছে আমার ডুরিতে

পায়ে পায়ে হিরন্ময় রাত্রি ঘোরে, কাঙ্ক্ষাপ্রকৃতির
চাপা অভিমান, জল এসে ঢোকে কাঁকর-লোহায়

পাহাড়পর্বত আর সূর্যকণার তাপনিশ্বাস লেগে
চালের বাতায় খসে পড়ছে আমারই অন্ধদশা

আর রেশম পাতায় নদীটির ভের নক্ষত্র
ছায়া ধরে বসে আছে, শিশিররুপোলি...





প্রস্ফুটিত পেশী
মাদল হাসান

পাখির গর্জন শুনে বুঝলো সময়া হয়তো গরমিল করেছে হাইব্রিড গমেরা। ময়ূরেরা ক্রেংকার ছেড়ে হিস্ হিস্ করে ওঠে ঔচিত্যে। মাহুত মানে নি ওই ঐরাবত। পশুরা পাগল বলে নি তাঁকে। বলেছে অন্য কেউ। তাই হাতির হালুম আর হরিণের হুংকার শুনে শিস দিয়ে উঠলো বাঘেরাও। রিমঝিম শব্দে এলো খরা। বৃষ্টিতে চৌচির হলো মাঠ। সজল বরষায় গজল গেয়ে উঠলো ব্যাঙফাটা বোধ। রাহুমুক্ত রোদের প্লাবনে ভেসে গেল গ্রাম ও গ্রামার। গোসাপের গুঞ্জনের ফাঁকে শাপলা ফোটার শব্দ শুনতে পেল সদালাপী শকুন। ঘেউ ঘেউ করে উঠলো মশারা। মিঁউ মিঁউ করলো মক্ষিকা। সময় সেলাম ঠুকে বলে--কোথায় এলাম তবে? দারুণ দক্ষিণায়ণে দাউ দাউ শান্তির সুবাতাস গলে গলে পড়ছে বরফাগ্নি থেকে। এবারের সময়ের নাম সমন্বয়কারী। তবে শোনো ওই মারণাস্ত্রের মর্মরধ্বনি। দ্যাখো, ভারীপানির পুকুরে প্রস্ফুটিত পেশী। আরক্ত আচমন আজ। তবু তুমি চাও কথাহীন কত্থকনাচের নৈর্ব্যক্তিকতা, ঠিকানাবিহীন ঠার? ‘মুমূর্ষু, মুদ্রাগুলি মৌলিক’-বলেই নিখিলের মঞ্চ থেকে নেমে যায় নটরাজ। খ্যামটার খাতাসহ দৌড়ে আসে এক দাম্ভিক দর্জি। নাচের পোশাক বানানোর মজুরি হিসেবে মৌলিক মুদ্রা চায়...




পর্ব২৬ বছর
রঙ্গীত মিত্র

পাখি তার জামা ফেলে গেছে
ফেলে গেছে খেলবার সাথে
রেশ
আমি শুধু তার দেহ দেখে যাই
দেহের বাইরেরও প্রকৃতি আছে
সেটা জানিনা বলে ভুল করে গেছি
কিছু অক্ষর বিড় বিড় করে
বৃদ্ধদের আড্ডার মতন
ম্লান শব্দরা ঘরের বিছানা বালিশে
এখানে আমকে কেউ চায় না
সবার চাহিদা বরং বেড়ে গিয়েছে...আমি শুধু হাতড়ে বেড়াই।




বাণিজ্যে বসতে তরী
ঐত্রেয়ী সরকার

তোমার শহরপ্রান্তে পাহারায় বসে দেবদূত
হা-ঘরে অতন্দ্র দৈব ছুঁতে চায় মায়াবী বুদ্বুদ

সময়ে বিদ্রূপ আসে, অসময়ে যত হত্যাকারী
অপেক্ষা সম্বল করে প্রহরায় জেগেছে আনাড়ি

এখনও সে রুগ্ন দিনে অসতর্কে গুমরে ওঠে ঝড়
শব্দের যা বলা মানা সে কথার আমি সদাগর।