সেপ্টেম্বর '১১-এর কবিতা
Posted by Kobiyal on Friday, September 16, 2011
Under: কবিতা
মাছ
সিদ্ধার্থ হক
মানুষ আহত হলে জলে নেমে মাছ হয়ে যায়।
গম্ভীর জাহাজ এসে ঘরের ভিতরে ঢোকে, ভাসে, কথা বলে।
জ্বর ও ঢেউএর ঘোরে বহুদূর থেকে নদী বারবার ডাক দেয় তাকে।
খরস্রোত ব্যাস্ত হয়ে ওঠে চেতনায়।
স্বপ্ন এক খেপা গ্রাম, বিছানার পাশে এসে নদীর দুপাড় তৈরি করে।
রাত্রিভর ভেসে চলে গাছ আর বাতাসের পুঞ্জীভূত বেহালার ভাব।
ভোর হলে অংশত বিচূর্ণ হয় সংগোপন ঝড়ে শূন্য ঘর।
মানুষ আহত হলে সহস্র বছর তাকে ছোঁয়।
সহস্র বছর পরে বাতাসের বেহালারা ভাবে
সহস্র বছর বাঁচা বেহালার শরীরে যে গান তা কি মাত্র বাতাসের?
মানুষের উপদ্রুত আয়ু তাতে মিলেমিশে নেই?
মানুষ আহত হলে জাহাজও আহত হয়, ফিরে যায় গভীর সমুদ্রে।
আহত হবার বোধে, ক্ষণিকের স্নিগ্ধ পরদেশে,
দূর গ্রামে বহমান নদীদের শ্রুতি উপন্যাস শেষ হলে
বাতাসের কাটাছেঁড়া অবয়ব থেকে নিঃশেষের নল নামে।
ঘরের ভিতরে ভাসা এত কিছু সাথে নিয়ে বাউল সে জ্বর
মগ্ন লাল সাইরেন-আলো হয়ে কুয়াশায় ঘোরে, ঘোরে, ঘোরে।
মানুষ আহত হয় প্রতিদিন;
নীল জলে স্নান করে কদাচিৎ শুধু।
তখন মুহূর্ত জলে স্থির হয়ে থেকে,
দেখে সে নিজেও এক ক্ষত হওয়া অনশ্বর জল,
ডুব দিয়ে কে জানে কখন ধুধু বেদনায় মাছ হয়ে গেছে।
নকশা
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
লিখি প্রেম, ফুললতাপাতা যেন, যৌনতা-আঁকা ফ্রেমটিতে।
ক-অক্ষর তুলি। অম্নি দেহপট ঘুম ভেঙে ওঠে নিজে-নিজে।
পিছল বাজনার ঘাট, পিচ্ছিলতা চায় আরও! আরও!
কে রাগ বাজাবে,
নখে মিজরাব, অধোমুখ, আমি-ই বাজাব, তবে
শরীর ভাসাবে সাদাজল!
যেমত যোগিনী, মাত্র হৃদয়ব্যতীত কিছু সঙ্গে নিইনি,
আর, অনিদ্রা পরেছি, সে তো অঙ্গরাগ, চোখের কাজল!
দূরে আছ
একটা পিস্তল চাই
সাঈদ জুবেরী
(উৎসর্গ : বিষ্ণু বিশ্বাস ও শোয়েব শাদাবকে )
একটা পিস্তল রাখতে চাই পকেটে
ওটা লুকিয়েই
বন্ধু তোমার সাথে
শত্রু তোমার সাথে
কোলাহলের ভিতর শোরগোলের ভিতর চুপচাপের ভিতর
বয়ে যেতে চাই...
যেন
অসহায় মুহূর্তে
আমাকে বাজারে তোলার আগেই সুইসাইড খেয়ে নিতে পারি
যেন
আমার অসহায়ত্বকে পুঁজি করে
সমাজের সহানুভূতির মতন ভয়ঙ্কর
শূলে না চড়তে হয়
যেন
আমার অসহায়ত্বকে পাবলিসিটি করে
আমার 'প্রকৃত আমি'কে খাটো হতে না হয়
যেন
আমার অসহায়ত্ব বন্ধু-স্বজনের মতো
সম্পর্কের দায় চুকাবার চাক্তি না হয়ে যায়
অথবা
আমার শত্রুরা যেন আমাকেই ব্যবহার করে নিতে না পারে
সেই অসহায় অবস্থার জন্য
পকেটে একটা পিস্তল রাখতে চাই
যেন আমাকে বাজারে তোলার আগেই সুইসাইড খেয়ে নিতে পারি
পাতালকন্যার গল্প
রাকা দাশগুপ্ত
এ কলম অভিশপ্ত। এ কালি বিষাদনীল শিরা।
কাগজে আঁচড় দিলে যেটুকু আদল ফোটে, সেও এক অনতিশরীরা
পাতালকন্যার কথা। সেখানে শুরুও নেই, শেষও...
এ এক সুড়ঙ্গপথ। অন্ধকার সিঁড়িধাপ। পায়ে পায়ে নীচে নেমে এসো।
এখানে মানুষ নেই। মৃত গাছেদের সারি, আগাছার বন
ছোট নুড়িপথ ধরে একা পায়ে হেঁটে যাওয়া, একাত্মকথন।
এ কলমে কোনওদিন তৃপ্তি নেই। শান্তি নেই তবুও না-লিখে।
উপলবিকীর্ণ দেশ। দানা নেই। পানি নেই।
অক্ষর কুড়িয়ে খায় চড়াই-শালিকে।
পাতালবালিকা এসে কোল দেয়, ঘুম দেয় পাখিদের...রোজ...
নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে, জেগে থাকে ম্লানমুখ হলুদ কাগজ।
প্রতি রাত্রে স্বপ্নে তার হানা দেয় অবরুদ্ধ কবিতার প্রেত
বিষাদশিরার নীলে একে একে লেখা হয় সহাস্য বয়েৎ।
সংকীর্তন
দীপান্বিতা সরকার
ভাসানের পরে একরত্তি ঘোর নামে কড়ি মধ্যমে। আগাছায় জোনাক-জোনাকি, তুমি ব্রহ্মাণ্ড বাজি রাখো কিশোরী সকাশে। ঝিম তার কবেকার অন্ধকারে বকুল বিছায়ে সন্ধ্যামণি খমক বাজালে ভারি। তার আওয়াজে জিভ ছড়ে গেল। ব্যথাফুলে গুঞ্জরিছে বালিকা বালিকা নাম...
সেই নামগানে ভেসে যাওয়া হাওয়াঘর। হরিধ্বনি ওই ক্ষতঠোঁট বয়ে নিয়ে চলেছে যমুনা অবধি।
ঘুম
দেবর্ষি সরকার
কোথায় রেখেছো মন বিষ?
একে একে নিভে যাচ্ছে অবিরাম আলোর বন্দিশ
অনিদ্রা যেহেতু জানে স্নায়ুতন্তু, প্রেমের রসদ
ধারালো ছুরির ফলা আড়াআড়ি কাটে আঁখিপথ
আমি অন্ধ, ধীরে ধীরে ভাঙা সেই পথ ধরে হাঁটি
বিকেলে কুড়িয়ে পাওয়া জড়োসড়ো আলো তো পোয়াতি
তার পেটে ব্রহ্মাণ্ড শুয়ে, পেটে তার শুয়ে বাল্যকাল
নিজে হাতে নাড়ি কাটলে বেজে ওঠে প্রথম সকাল
প্রতি রাতই গর্ভপাত, কাঁচা ভ্রুণ ঝোলে শাখে শাখে
মানুষ শিকার চেনে, শিকারও চিনেছে কিছু তাকে...
ও
সোনালি সেনগুপ্ত
আমি ওকে রোজদিন মনে করি এখনও
ঘুমোবার আগে, বাথরুমে শাওয়ার অন করবার সময়
সাবানের ফেনার আড়ালে, সানগ্লাসের ধোঁয়াটে কাচের নীচে
লাল জ্বলতে থাকা চোখে,
অসময়ে মুখ তুলে দাঁড়ানো স্তনবৃন্তে
ওকে ছুঁয়ে নিই আমি
এখনও প্রত্যেক রাত্রে আমি দেখতে পাই
জানালায় ওর ঝলসানো সিল্যুয়েট
একবিন্দু আগুন
ওর ঠোঁটে ঝোলা সিগারেটের কোনায়
এখনও অদৃশ্য সঙ্গমের শেষে
ওর ঘামে ভিজে থাকে আমার শরীর...
দমবন্ধ হয়ে আসা এই একলা ভিড়ের মধ্যে
শুধু ও-ই ধরে থাকে আমার কোমর...
আর নীচে তাকালেই আমি দেখতে পাই
এক টুকরো লাল ক্ষত
নীলচে বুড়ো আঙ্গুলের মাথায় একটা অনেকদিনের
সযত্নে না কাটা নখ...
আমার ঊরুর উপরে নুয়ে থাকা
একটা হলুদ নার্সিসাস...
ড্রিম সিকোয়েন্স
শ্রীদর্শিনী চক্রবর্ত্তী
ওষুধের গুণাগুণ, দামি হ'লে টের পাওয়া যায়
শরীরের বেশ একটু আগেই।
লেপের উপরে মেলা খবর কাগজ থেকে একে একে ভেসে এসে
চোখের প্যালেটে টলমল, নিদারুণ কমফর্ট-প্রবণ -
তুমুল জ্বরের ঘোরে একে একে পেরিয়ে যাচ্ছি
এইসব অক্ষর-জীবন।
কচিকলাপাতা-রং শাড়ীটা যেন বা কেউ বাইয়ে দিয়েছে
কেঠো আলমারির ভেতর চৌখোপে,
এভাবেও দৃশ্য এঁকেছি।
দু'চোখ বুজেছি ঘন কালো রঙ যেখানে যেখানে।
এছাড়া ছবির বাইরে আরও কিছু জিনিস রয়েছে,
যেমন আমি নিজেই, অথবা ঠাণ্ডা জল, আর যা যা নিত্যপ্রয়োজন।
তোমাকে দেখিনি আগে,
যে এসে দাঁড়িয়ে আছো - দরোজার কপাটে হেলান
বাল্যস্মৃতির মতো রোগা!
নদীর ধারের বাড়িগুলোয়
সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়
নদীর ধারের বাড়িগুলোয় কেউ থাকে না
জল পেরিয়ে কাঁটাতার, মাঝখানে দ্বীপ
নদীর ধারের বাড়িগুলোয় শুধু হাওয়া-
হাওয়াঋতুর রাত্রিদিন।
শুকনো পাতার মতো উড়ে আসে মুখ
জলের মধ্যে অদৃশ্য পথ ডুবে থাকে
নৌকায় মাঝি নেই
সারবেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িগুলোয়
শনশন হাওয়ার দিনরাত।
ওপারে কাঁটাতার, গঞ্জশহর এপারে
দরজা, জানলায় নক্ষত্রের ফুল
এ কোন দেশ, আমিই বা কে
জলের গান কেউ গায় দ্বীপে।
শুকনো পাতার মতো ভেসে আসে মুখ
লবণাক্ত ঠোঁটের ছোঁয়ায় পাড় ভাঙে অবিরত
দূর থেকে কাছে আসে ট্রেন
কামরায় চড়ে বসি আমি
হাজার যাত্রীর ছায়া মাখি গায়ে।
নদীর ধারের বাড়িগুলোয় কেউ থাকেনা কখনও
শুধু হাওয়া, হাওয়াঋতুর রাতদিন...
সিদ্ধার্থ হক
মানুষ আহত হলে জলে নেমে মাছ হয়ে যায়।
গম্ভীর জাহাজ এসে ঘরের ভিতরে ঢোকে, ভাসে, কথা বলে।
জ্বর ও ঢেউএর ঘোরে বহুদূর থেকে নদী বারবার ডাক দেয় তাকে।
খরস্রোত ব্যাস্ত হয়ে ওঠে চেতনায়।
স্বপ্ন এক খেপা গ্রাম, বিছানার পাশে এসে নদীর দুপাড় তৈরি করে।
রাত্রিভর ভেসে চলে গাছ আর বাতাসের পুঞ্জীভূত বেহালার ভাব।
ভোর হলে অংশত বিচূর্ণ হয় সংগোপন ঝড়ে শূন্য ঘর।
মানুষ আহত হলে সহস্র বছর তাকে ছোঁয়।
সহস্র বছর পরে বাতাসের বেহালারা ভাবে
সহস্র বছর বাঁচা বেহালার শরীরে যে গান তা কি মাত্র বাতাসের?
মানুষের উপদ্রুত আয়ু তাতে মিলেমিশে নেই?
মানুষ আহত হলে জাহাজও আহত হয়, ফিরে যায় গভীর সমুদ্রে।
আহত হবার বোধে, ক্ষণিকের স্নিগ্ধ পরদেশে,
দূর গ্রামে বহমান নদীদের শ্রুতি উপন্যাস শেষ হলে
বাতাসের কাটাছেঁড়া অবয়ব থেকে নিঃশেষের নল নামে।
ঘরের ভিতরে ভাসা এত কিছু সাথে নিয়ে বাউল সে জ্বর
মগ্ন লাল সাইরেন-আলো হয়ে কুয়াশায় ঘোরে, ঘোরে, ঘোরে।
মানুষ আহত হয় প্রতিদিন;
নীল জলে স্নান করে কদাচিৎ শুধু।
তখন মুহূর্ত জলে স্থির হয়ে থেকে,
দেখে সে নিজেও এক ক্ষত হওয়া অনশ্বর জল,
ডুব দিয়ে কে জানে কখন ধুধু বেদনায় মাছ হয়ে গেছে।
নকশা
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
লিখি প্রেম, ফুললতাপাতা যেন, যৌনতা-আঁকা ফ্রেমটিতে।
ক-অক্ষর তুলি। অম্নি দেহপট ঘুম ভেঙে ওঠে নিজে-নিজে।
পিছল বাজনার ঘাট, পিচ্ছিলতা চায় আরও! আরও!
কে রাগ বাজাবে,
নখে মিজরাব, অধোমুখ, আমি-ই বাজাব, তবে
শরীর ভাসাবে সাদাজল!
যেমত যোগিনী, মাত্র হৃদয়ব্যতীত কিছু সঙ্গে নিইনি,
আর, অনিদ্রা পরেছি, সে তো অঙ্গরাগ, চোখের কাজল!
দূরে আছ
একটা পিস্তল চাই
সাঈদ জুবেরী
(উৎসর্গ : বিষ্ণু বিশ্বাস ও শোয়েব শাদাবকে )
একটা পিস্তল রাখতে চাই পকেটে
ওটা লুকিয়েই
বন্ধু তোমার সাথে
শত্রু তোমার সাথে
কোলাহলের ভিতর শোরগোলের ভিতর চুপচাপের ভিতর
বয়ে যেতে চাই...
যেন
অসহায় মুহূর্তে
আমাকে বাজারে তোলার আগেই সুইসাইড খেয়ে নিতে পারি
যেন
আমার অসহায়ত্বকে পুঁজি করে
সমাজের সহানুভূতির মতন ভয়ঙ্কর
শূলে না চড়তে হয়
যেন
আমার অসহায়ত্বকে পাবলিসিটি করে
আমার 'প্রকৃত আমি'কে খাটো হতে না হয়
যেন
আমার অসহায়ত্ব বন্ধু-স্বজনের মতো
সম্পর্কের দায় চুকাবার চাক্তি না হয়ে যায়
অথবা
আমার শত্রুরা যেন আমাকেই ব্যবহার করে নিতে না পারে
সেই অসহায় অবস্থার জন্য
পকেটে একটা পিস্তল রাখতে চাই
যেন আমাকে বাজারে তোলার আগেই সুইসাইড খেয়ে নিতে পারি
পাতালকন্যার গল্প
রাকা দাশগুপ্ত
এ কলম অভিশপ্ত। এ কালি বিষাদনীল শিরা।
কাগজে আঁচড় দিলে যেটুকু আদল ফোটে, সেও এক অনতিশরীরা
পাতালকন্যার কথা। সেখানে শুরুও নেই, শেষও...
এ এক সুড়ঙ্গপথ। অন্ধকার সিঁড়িধাপ। পায়ে পায়ে নীচে নেমে এসো।
এখানে মানুষ নেই। মৃত গাছেদের সারি, আগাছার বন
ছোট নুড়িপথ ধরে একা পায়ে হেঁটে যাওয়া, একাত্মকথন।
এ কলমে কোনওদিন তৃপ্তি নেই। শান্তি নেই তবুও না-লিখে।
উপলবিকীর্ণ দেশ। দানা নেই। পানি নেই।
অক্ষর কুড়িয়ে খায় চড়াই-শালিকে।
পাতালবালিকা এসে কোল দেয়, ঘুম দেয় পাখিদের...রোজ...
নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে, জেগে থাকে ম্লানমুখ হলুদ কাগজ।
প্রতি রাত্রে স্বপ্নে তার হানা দেয় অবরুদ্ধ কবিতার প্রেত
বিষাদশিরার নীলে একে একে লেখা হয় সহাস্য বয়েৎ।
সংকীর্তন
দীপান্বিতা সরকার
ভাসানের পরে একরত্তি ঘোর নামে কড়ি মধ্যমে। আগাছায় জোনাক-জোনাকি, তুমি ব্রহ্মাণ্ড বাজি রাখো কিশোরী সকাশে। ঝিম তার কবেকার অন্ধকারে বকুল বিছায়ে সন্ধ্যামণি খমক বাজালে ভারি। তার আওয়াজে জিভ ছড়ে গেল। ব্যথাফুলে গুঞ্জরিছে বালিকা বালিকা নাম...
সেই নামগানে ভেসে যাওয়া হাওয়াঘর। হরিধ্বনি ওই ক্ষতঠোঁট বয়ে নিয়ে চলেছে যমুনা অবধি।
ঘুম
দেবর্ষি সরকার
কোথায় রেখেছো মন বিষ?
একে একে নিভে যাচ্ছে অবিরাম আলোর বন্দিশ
অনিদ্রা যেহেতু জানে স্নায়ুতন্তু, প্রেমের রসদ
ধারালো ছুরির ফলা আড়াআড়ি কাটে আঁখিপথ
আমি অন্ধ, ধীরে ধীরে ভাঙা সেই পথ ধরে হাঁটি
বিকেলে কুড়িয়ে পাওয়া জড়োসড়ো আলো তো পোয়াতি
তার পেটে ব্রহ্মাণ্ড শুয়ে, পেটে তার শুয়ে বাল্যকাল
নিজে হাতে নাড়ি কাটলে বেজে ওঠে প্রথম সকাল
প্রতি রাতই গর্ভপাত, কাঁচা ভ্রুণ ঝোলে শাখে শাখে
মানুষ শিকার চেনে, শিকারও চিনেছে কিছু তাকে...
ও
সোনালি সেনগুপ্ত
আমি ওকে রোজদিন মনে করি এখনও
ঘুমোবার আগে, বাথরুমে শাওয়ার অন করবার সময়
সাবানের ফেনার আড়ালে, সানগ্লাসের ধোঁয়াটে কাচের নীচে
লাল জ্বলতে থাকা চোখে,
অসময়ে মুখ তুলে দাঁড়ানো স্তনবৃন্তে
ওকে ছুঁয়ে নিই আমি
এখনও প্রত্যেক রাত্রে আমি দেখতে পাই
জানালায় ওর ঝলসানো সিল্যুয়েট
একবিন্দু আগুন
ওর ঠোঁটে ঝোলা সিগারেটের কোনায়
এখনও অদৃশ্য সঙ্গমের শেষে
ওর ঘামে ভিজে থাকে আমার শরীর...
দমবন্ধ হয়ে আসা এই একলা ভিড়ের মধ্যে
শুধু ও-ই ধরে থাকে আমার কোমর...
আর নীচে তাকালেই আমি দেখতে পাই
এক টুকরো লাল ক্ষত
নীলচে বুড়ো আঙ্গুলের মাথায় একটা অনেকদিনের
সযত্নে না কাটা নখ...
আমার ঊরুর উপরে নুয়ে থাকা
একটা হলুদ নার্সিসাস...
ড্রিম সিকোয়েন্স
শ্রীদর্শিনী চক্রবর্ত্তী
ওষুধের গুণাগুণ, দামি হ'লে টের পাওয়া যায়
শরীরের বেশ একটু আগেই।
লেপের উপরে মেলা খবর কাগজ থেকে একে একে ভেসে এসে
চোখের প্যালেটে টলমল, নিদারুণ কমফর্ট-প্রবণ -
তুমুল জ্বরের ঘোরে একে একে পেরিয়ে যাচ্ছি
এইসব অক্ষর-জীবন।
কচিকলাপাতা-রং শাড়ীটা যেন বা কেউ বাইয়ে দিয়েছে
কেঠো আলমারির ভেতর চৌখোপে,
এভাবেও দৃশ্য এঁকেছি।
দু'চোখ বুজেছি ঘন কালো রঙ যেখানে যেখানে।
এছাড়া ছবির বাইরে আরও কিছু জিনিস রয়েছে,
যেমন আমি নিজেই, অথবা ঠাণ্ডা জল, আর যা যা নিত্যপ্রয়োজন।
তোমাকে দেখিনি আগে,
যে এসে দাঁড়িয়ে আছো - দরোজার কপাটে হেলান
বাল্যস্মৃতির মতো রোগা!
নদীর ধারের বাড়িগুলোয়
সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়
নদীর ধারের বাড়িগুলোয় কেউ থাকে না
জল পেরিয়ে কাঁটাতার, মাঝখানে দ্বীপ
নদীর ধারের বাড়িগুলোয় শুধু হাওয়া-
হাওয়াঋতুর রাত্রিদিন।
শুকনো পাতার মতো উড়ে আসে মুখ
জলের মধ্যে অদৃশ্য পথ ডুবে থাকে
নৌকায় মাঝি নেই
সারবেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িগুলোয়
শনশন হাওয়ার দিনরাত।
ওপারে কাঁটাতার, গঞ্জশহর এপারে
দরজা, জানলায় নক্ষত্রের ফুল
এ কোন দেশ, আমিই বা কে
জলের গান কেউ গায় দ্বীপে।
শুকনো পাতার মতো ভেসে আসে মুখ
লবণাক্ত ঠোঁটের ছোঁয়ায় পাড় ভাঙে অবিরত
দূর থেকে কাছে আসে ট্রেন
কামরায় চড়ে বসি আমি
হাজার যাত্রীর ছায়া মাখি গায়ে।
নদীর ধারের বাড়িগুলোয় কেউ থাকেনা কখনও
শুধু হাওয়া, হাওয়াঋতুর রাতদিন...
In : কবিতা