ডেভিড ওয়াগোনার

 

[ডেভিড ওয়াগোনার : জন্ম ১৯২৬, ম্যাসিলন, ওহাইও। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : গুডমর্ণিং অ্যান্ড গুডনাইট(২০০৫), ইন ব্রোকেন কান্ট্রি(১৯৭৯), ফার্স্ট লাইট(১৯৮৩), কালেক্টেড পোইমস্ ১৯৫৬-১৯৭৩, হু শ্যাল বি দ্য সান(১৯৭৮)। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের ফেলোশিপ ও অন্যান্য পুরস্কার পেয়েছেন। 'দি অ্যাকাডেমি অফ অ্যামেরিকান পোইটস্'-এর চ্যান্সেলর ছিলেন। 'পোইট্রি নর্থওয়েস্ট' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ১৯৬৬ থেকে শেষ প্রকাশিত সংখ্যাটি পর্যন্ত(২০০২)। থাকেন ওয়াশিংটন রাজ্যের বটহেল শহরে।

এই কবিতাটি ৩৫ বছর আগে রচিত; প্রকাশিত হয়েছিল 'পোইট্রি' পত্রিকায়, ১৯৭২ সালে।]

 

সরস্বতী (The Muse)

 

কর্পূরগন্ধী, হংসধ্বনীময়ী, দেবীর ঠোঁটে ঝুলছে

গোলাপি বরফটুকরো, তাঁর গলার অর্ধেক জুড়ে

লেপ্টে আছে লিপস্টিক, রক্তমাখা তীক্ষ্ণ টুকরো-টাকরা

ছড়াচ্ছে দাঁত-কিড়মিড়ের রাগি শব্দ, আমার কাঁধে

তিনি হেলান দিয়ে।

ওগো আমার একমাত্র আশাভরসা,

আমার হারানো বিহ্বল লটবহর, আমার কোমলস্তনী,

শিথিল-চোয়াল ধর্মান্ধ দেবী,

আবার চুমু খাও আমায়।

 

 

 

সন্ড্রা শার্প

 

[সন্ড্রা শার্প : জন্ম ১৯৪২। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত, বর্তমানে আমেরিকান। কবি, লেখিকা, ফিল্মমেকার, প্রযোজক, অভিনেত্রী। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : টাইপিং ইন দ‌্য ডার্ক, সফ্ট সং। নিজের কবিতার অ্যালবাম 'অন দ‌্য শার্প সাইড-এর মঞ্চাভিনেত্রী। কালো মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবিকা হিসাবে সাক্ষরতাকর্মীর কাজ করেন।]

 

পরম্পরা

 

লোকটা ধর্ষণ করল

মেয়েটা কেঁদেছিল

লোকটা মেরেছিল

মেয়েটা মিটিয়ে ফেলল

লোকটা ঘুমিয়ে পড়ল

মেয়েটা কেটে দিল

লোকটার অহমিকার মর্মস্থল অবধি।

 

লোকটা পেল সমবেদনা

মেয়েটা থাকল আতঙ্কে

লোকটা নিরপরাধ

মেয়েটা পাগল

লোকটা মুক্ত

মেয়েটা বদনামের ভাগী

সেই নাকি মতলব ভেঁজেছিল

 

পাদ্রি আশা ছেড়ে দিলেন

কমিক-পত্রিকাগুলি চেঁচামেচি শুরু করল

প্লাস্টিক-সার্জনেরা স্বপ্ন দেখলেন

কিন্তু ওয়াল স্ট্রিটে

নির্বাক নারীরা

কসাইয়ের ছুরি অভিমুখে

মজুত মালের দিকে নিক্ষিপ্ত হল

১৪ শতাংশ অবধি

 

 

এসমারেলদা বেরনাল

 

[এসমারেলদা বেরনাল : শ্রীমতী এসমারেলদার পড়াশোনা সান্টাক্রুজস্থিত ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। আদিবাসী ইন্ডিয়ান হিসাবে তাঁর গবেষণাও দেশীয় নারী এবং ঔপনিবেশিকতা-অধীন লিঙ্গের সামাজিক নির্মাণ বিষয়ে। কবিতাটি গৃহীত হয়েছে 'The Woman That 9 Am সংকলন থেকে।]


আমার গর্ভাশয় (My Womb)

 

আমার গর্ভাশয়

একটা বারোয়ারি এক্তিয়ার

যৌনকাম একখানা পাপোশ

জন্মগত অধিকারে পদপিষ্ট

 

আমার গর্ভাশয় একখানা

আইনি চৌহদ্দি

আর আমার নিজের নয়

জনগণের জায়গা

 

আমার গর্ভাশয়

একটা প্যালেস্তিনীয় যুদ্ধক্ষেত্র

ব্যক্তিগত জায়গা হওয়ার

অধিকারের জন্য

যুদ্ধে লিপ্ত

 

 

ম্যাথু রোরার

 

[ম্যাথু রোরার : জন্ম ১৯৭০, অ্যান আরবর, মিশিগান। ৭ বছর বয়সে চলে আসতে হয় ওকলাহামায়। মিশিগানে ফেরেন ১৮ বছরে। আইওয়া রাইটার্স ওয়ার্কশপ থেকে এম এফ এ(১৯৯৪)। তারপর থেকে নিউইয়র্কে। 'ফেন্স' পত্রিকার অন্যতম কবিতা-সম্পাদক।]

 

প্রদীপের দিকে হড়কে যাওয়া


কোনও মহিলা যেভাবে নিজের ঘরকন্না সামলায়

তাতে আমার ইচ্ছে করে সেখানে শুয়ে-ঘুমিয়ে

দেখতে যে সে একা-একা কীভাবে নিজেকে খাপ-খাইয়ে নেয়।

 

রাস্তার ওপার থেকে আমি দেখি এই মহিলা ঘেঁষাঘেঁষি ভালোবাসে :

তার কুলুঙ্গিগুলো গলাবন্ধের চাপে শ্বাসরুদ্ধ।

দেয়ালের গা ঘেঁষে কুণ্ডলী-পাকানো হয়ে-থাকতে কল্পনা করি আমি,

তেলে-ভাজা কোনও কেক খেতে দেখি তাকে।

 

বাড়ির দিকে হড়কে যেতে-যেতে আমি 'রোবট-বান্ধবী'-র কথা ভাবি,

আমি তার চোখের মধ্যে ছোট্ট আলোগুলির দিকে ভেসে চলে যাই।

আমি সবরকমভাবে মহিলার ঘাঁতগোঁত ঘুরেফিরে দেখেছি

ফিউজ-বক্সটা কখনও খুঁজে পাইনি। মহিলা কাজকর্ম করে কীভাবে, জানি না।

ভাবি সে যেভাবে দুমড়ে-মুচড়ে শুয়ে থাকে

এলোমেলো বিছানায়, তার ভেতরের সবকিছুর সুইচ চালু আর একটানা মুদু শব্দ।

 

আমার ঘাড় ফের কাঁচিকাটা করার জন্য আমি ভালোবাসব তার নগ্ন বাহু দুটি।

 

 

 

ক্যারল স্নো

 

[ক্যারল স্নো : পঞ্চাশের কোঠায় বয়স। শ্রীমতী ক্যারল থাকেন অ্যাপালেচিয়ান পর্বতশ্রেণীর অ্যালেগেনি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। ইনি 'ইরোকুয়ো' জাতির 'সেনাকা' উপজাতির অন্তর্ভূক্ত। ক্যারল কবি হিসাবে তো বটেই, অঙ্কনশিল্পী হিসাবেও বিখ্যাত। প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের সক্রিয় কর্মী। তাঁর আঁকার বিষয় বন্যপ্রাণী। প্রাণীবিদ্যায় বি.এ এবং এম.এস - দুটো ডিগ্রি। প্রথমদিকে আঁকতেন কালিকলমে, তারপর ১৯৮০ থেকে কালি ও অ্যাক্রিলিকের মিশ্রণে আঁকা শুরু করেন। ১৯৮৪ থেকে ছাপাইকর্মে একধরণের বিশেষত্ব আরোপ করে বিশিষ্ট হয়ে উঠেছেন।]

 

ঢাকের আওয়াজ

 

শোনো... ... ...

ওই যে! তুমি কি শুনতে পাচ্ছো না?

তোমার ওই ভিড়ে জনাকীর্ণ শহর থেকে চলে এসো

এক ঈগল-পাখিদের আস্তানায়

আর তারপর হয়তো শুনতে পাবে তুমি।

এইবারটির মতো নিশ্চল হও :

তোমার ওই তুরপুন লাগানো জিভের

ঘ্যানঘ্যানানি বন্ধ করো।

তোমার হৃদয়ের কান থেকে

সরিয়ে নাও স্টেইনলেস স্টিলের হাত

আর শোনো।

নাকি ভুলে গেছ কীভাবে তা করবে?

তারা এখনও সেখানেই রয়েছে

এই শত-শত শতাব্দ জুড়ে

আর তোমাদের ওইসব ধাতব বজ্র

স্তব্ধ করেনি তাদের।

বাতাসই সংবাদবাহক,

প্রেতাত্মার ফিসফিসানি শোনো কান দিয়ে।

এবার... ঢাকগুলি এখনও কথা বলে,

অ্যান্টিলোপ সমভূমি পার হয়ে,

তোমার রক্তের শিরার মধ্যে :

পৃথিবীমায়ের

হৃদয়ের স্পন্দন।