এনরিকে গনসালেস মার্টিনে (১৮৭১-১৯৫২) বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট স্প্যানিশ কবি। সময় ও মেজাজের দিক থেকে তাকে মডার্নিজম ও সাম্প্রতিক পোয়েট্রি-স্কুলের মধ্যবর্তী বলা যায়, যদিও তাঁর প্রথম দিকের লেখা অনেকটাই মডার্নিস্ট-ঘেঁষা। পরবর্তীকালে তিনি খুঁজে পান নিজের ফর্ম ও কণ্ঠস্বর যা পোস্টমডার্ন বা তার সহোদর। ফলতঃ তৈরি হল তাঁর ভক্ত ও অনুরাগীবৃন্দ, কিন্তু তাঁকে কপি করা যায়নি। মডার্নিজম-কে উন্মুক্ত করে তিনি বাদ দিলেন আবেগের বাড়াবাড়ি ও সেন্টিমেন্ট। এল চিন্তার উপাদান, বুদ্ধি ও মেথার অনুপ্রবেশ, তার সঙ্গে যুক্ত হল মেক্সিকান আঞ্চলিকতা ও ট্র্যাডিশন, সুতরাং তাঁকে প্রথম আঞ্চলিক কবি বলাই যায়।

এনরিকের প্রথম বই : The death of swan (1905), আর উল্লেখযোগ্য বই হল : Hidden paths, Parables & other poems, The words of the winds, Furtive signs, Truncated poems, Babel (1949) ইত্যাদি। Poesias নামে বেরিয়েছে complete works। তাঁর কবিতা খুঁটিয়ে পড়লে কালো প্যাঁচা বনাম সাদা রাজহাঁসের গলার কথা মনে পড়ে, অর্থাৎ মোহিনী প্যারাডক্স... পুরোটা জানতে এনরিকে-কে অন্তত তিনবার পড়তে হবে।



দুই দরজাওয়ালা বাড়িটা

ওই বাড়িটা, দুই দরজাওয়ালা, যেটা শুধু আমার,
বিরাট আর ছায়াচ্ছন্ন হৃদয়ের কারবারি
যা বছরখানেক অধিকারসূত্রে জেনেছি
কখনও অদ্ভুত অতিথি দিয়ে ভর্তি
আর অন্য সময়ে, প্রায়শই খালি

বাড়িটা যার ভিতর
জীবনের হাসিখুশি মুহূর্তের উপলব্ধিজাত
সেইসব না থামা স্বপ্নেরা
যারা আসতেও দেরি করে না, চলে যেতেও...

যেভাবে, অল্প কয়েকজন ভ্রমণকারী, বিদায়ের আগে
পরবর্তী আগন্তুকের জন্য রেখে যায় জ্বলন্ত উনুন 
সেই ভালো দরজার মুখে যেখান দিয়ে তারা চলে গিয়েছিল
অথবা দেয়ালের গায়ে লিখে রেখে মহান লিপিখানি...

তারা অধিকাংশই চলে যায় অসময়ের সূর্যাস্তের
অনিশ্চিত আলোর মধ্যে
কেউ কেউ পিছিয়ে যায় বাতিল এলাকার সন্ধানে
যেন বীরত্বব্যঞ্জক কিছু মৃত গানের চলমান আত্মা
কিম্বা যাত্রাপথের নীচে পড়ে থাকা ক্ষয়িষ্ণু পাথর

একা একা, রাত্রির নীরবতা ও শান্তির ভিতর 
এক অপরিচিত অতিথি ঝুলিয়ে রাখে
তার শান্ত বাতিদান
আর আমার মূর্ছাপীড়িত অস্থির মন কল্পনা করে,
এটাই তবে দেরিতে আসা ক্লান্ত ভালোবাসার আগমনী,
নাকি সেই পুরনো ক্ষত যা এখনও আমাকে ছেড়ে যায়নি



শেষ যাত্রা

ও চলে গেছে
রাস্তা চুপচাপ। ও গেছে
আমার ঠিক আগে, ওর নিজের টর্চ হাতে নিয়ে
ষড়যন্ত্রকারী বাতাসের থেকেও এগিয়ে গেছে।

ও সেই কবিতাটা বিড়বিড় করতে করতে চলে গেল
যেটা শেষ সন্ধ্যায় পড়তে পারেনি।
ওর হাসিটা মরে গেল আর ওর চোখে সেই
গভীর আশংকার ছায়া কেঁপে উঠেছিল, যা এখন
এতক্ষণে ও জেনে গেছে

আমি ওকে ডাকলাম, ওর পিছন পিছন হাঁটলাম
ও মুখ না ঘুরিয়ে বলল : "বাবা,
এই রইল আমার যৌবন, তোমাকে দিলাম।
এই রইল আমার হৃদয়, এই আমার রক্ত।"

যখন আমার দ্রুত পদক্ষেপ,
ওর অনুপস্থিতির কারণে আরও দ্রুত হয়ে
একসময় ওকে ধরে ফেলবে
সময়ের প্রতিচ্ছবিতে জ্বলন্ত গেলাসের কিছু আগে
আমি আবার দেখব ওর মুখ
ওর চোখ, ওর ভুরু ডুবে যাবে আমার বুকে
সেখানে ও আর আমি একসঙ্গে জেনে যাব
কে নির্ধারণ করে চলে যাওয়ার দিনটিকে
আর কেনই বা এই অন্তিমযাত্রা