একটা বানানো গল্প / সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
[ব্যাকড্রপে
যেটুকু সময় এলোমেলো তাকে কুড়িয়ে নেবার চেষ্টায় যে ছেলেটি একঘেয়ে পা বাড়িয়ে দক্ষিণ
থেকে হেঁটে এলো এই গল্প ওকে নিয়েও বটে। মঞ্চের অন্য দিকে একটি মেয়ে ঘড়ি দেখে,
শাড়ির আঁচল আনকোরা জড়ায় আঙুলে, এ গল্প তারও। এবং অন্য কয়েকজন, ছেলেটির বন্ধু,
মেয়েটির বান্ধবী, দু'জনেরই বাবা ও মায়েরা, কলেজের নোটস ঠাসা খাতা, জানলার ওপাশের
দোতলা অবয়ব, বিগত বছর বারো – সকলেই
কুশীলব এই গল্পের। বাকিরা এখন যদিও মঞ্চে নেই, তারাও আসতে পারে সময় এলেই।
থার্ড বেল পড়ে গেলে পর্দা উঠবে, তার আগে ওরা দু'জনেই খানিক দ্বিমাত্রিক, খানিক
আবছা হয়ে আছে।
থার্ড বেল বেজে ওঠে। পর্দায় সড়সড় টান।]
মেয়েটি : বড় দেরি করে এলে।
ছেলেটি : দেরি হল। অথচ বাড়ির থেকে বেরোলাম তখনও বুকপকেটে অনেক সময়। তখন
যায়নি বোঝা, এখানে পৌঁছে দেখি সময়ের সাথে ছিল ইঁদুরের পাশাপাশি বাস। খানিকটা
খেয়েছে তার ঢের বেশি ছড়িয়েছে এদিক সেদিক।
মেয়েটি : অজুহাতে তোমাকে হারাতে পারে এমন মানুষ খুঁজে পেলে আরও একবার আমি
হতে চাই দু'হাজার সাল। আরও একবার সেই কলকাতা - যখন প্রেমের নাম গোপনীয় কলমে কাগজে।
যে সময় কলকাতা ভুলেও ভাবেনি কোনও কবিতায় ঠাসা বিলবোর্ড। আরও একবার সেই
ছেলেটি : (খানিক বিরক্ত হয়) কবিতারা কবিতার মত থাক, কলকাতা নিজের খেয়ালে।
তুমিও তোমারই মত আছো, নেই বুঝি?
মেয়েটি : রাগ হল? অথচ তোমারও চশমাটা তিনবার বদলেছে বিগত দশকে। লিটল ম্যাগের
মেলা - গেছিলে সেখানে? গেলেই দেখতে পেতে যে দশক কাটালাম, সে দশক শূন্য দশক। কী করে
জানলো ওরা জানিনা এখনো। আমি তো শূন্যতাকে সাবধানে সাজিয়েছি বালিশের তোষকের নীচে।
ছেলেটি : এ কথার কোনও উত্তর হয় না কখনও। উত্তর হতে নেই এ সব কথার। শূন্যকে
যতবার যেভাবেই ভাগ করো, ভাগফলে প্রশ্ন শুধুই। কলেজেই মনে হয়, কোন এক গ্যালারির
ক্লাসে প্রবীণ অধ্যাপক বড্ড যত্ন করে বলেছিল এই সব আগড়ম বাগড়ম। দাঁড়াও, খাতাটা
খুঁজে দেখি।
[দোমড়ানো লম্বাটে খাতা। লম্বাটে, ময়লাটে, শাদা পাতা, রোল নম্বর, নাম ও অনার্স।
কোনওখানে পেন্সিল –
আবছায়া, মোটা। কোনওখানে আঁকিবুকি ঝর্ণা কলম। আঁকিবুকি, মানুষীর মুখ, চৌকোনা
হিজিবিজি ফ্রেম, অলীক ছাউনিঘর, ট্রামগাড়ি, কাটাকুটি নাম, উড়ন্ত ওড়নার ধার জুড়ে ঘন
ক্রসহ্যাচ, মুষ্টিবদ্ধ হাত আর এই সব পাতায় পাতায়। আরও আছে - উপুড় টিলার মত
প্রশান্ত গ্রাফ, চৌখুপি জঙ্গল, ডি ও ডিএক্স, ফোন নং। ছেলেটি খুঁজতে থাকে শূন্যের
ভাগফল, পায় না যদিও। যেটা পায়, সে কথাটা বাংলায় লেখা - 'ঝড়ের হদিশ নেই তবু দুলে
দুলে ওঠে সাঁকো'।]
ছেলেটি : কী আশ্চর্য! হারিয়ে গেছে দেখছি। অথচ মনে হয় এই খাতাতেই ছিল।
মেয়েটি : অথবা অন্য খাতা। আসলে তো অন্য সময়। কাজের কিছুই বুঝি পেলে না
এখানে?
ছেলেটি : একটা লাইন আছে, আগে পিছে আরও কিছু ছিল কি না একদম ভুলে গেছি।
মেয়েটি : (হেসে ওঠে। হেসে ওঠে কান্নার সুরে। বাসচাপা মানুষের তীব্র আর্তনাদ
মৃত্যুর আগে যে রকম রাস্তায় মিশে যায়, খানিকটা সেরকম, বাকিটুকু জবরদখলে।) আগে নয়,
পিছে ছিল আরেক লাইন - 'ঝড়ের হদিশ নেই তবু দুলে দুলে ওঠে সাঁকো / তোমার দু'চোখ
কাজললতায় এত যত্নে কী আঁকো?' প্রশ্নটা কাকে ছিল, মনে আছে?
ছেলেটি : লজ্জা দিলে।
মেয়েটি : এবং প্রথমবার কষ্ট ছাড়াও কিছু জানালে যে প্রাপ্তিস্বীকারে, আনন্দ
হল।
ছেলেটি : কষ্টের প্রাপ্তিস্বীকার অনেক করেছি তবে কোনদিনই সাক্ষাতে নয়। কখনও
বলতে পারো এমন কি নির্জন বুঝে বলে গেছি পাথরের কথা, নিটোল পাথর নয়, খোঁচা লাগে এমন
পাথর। কোনওদিনই বলেছি কি জল জমে আছে, ঘোলা জল, নিকাশীর রাস্তা জানি না।
মেয়েটি : বলোনি তা। কোনওদিনই বলোনি আমাকে। শুধু মাঝে মাঝে, আড্ডায়, কখনও বা
নতুন পত্রিকাতে ছাপা অক্ষরে, যে সব কবিতাকথা ডানা মেলে দিয়ে বিকেলকে মেঘে ঢেকেছিল,
সে কষ্ট কার তবে? তুমি বুঝি কেবলই কথক? অন্যের জেগে থাকা রাত্তির উদাসীন এঁকে গেছো
দম আটকানো ক্যানভাসে?
ছেলেটি : শোনো
মেয়েটি : (প্রবল উত্তেজিত, শুনবে না কিছু) তুমি শোনো, শোনা দরকার। এ সব
কবিতা কার তবে?
“যে ঘরের
দরজার
তালা এই মাত্র খুললাম
সেই ঘরে আমি একা
কাচের শার্সিতে দেখা যাচ্ছে আকাশের অন্ধকার
শোনা যাচ্ছে তোলপাড় নীরবতা
এই মাত্র ক'টা কথা, এই মাত্র রাত
অথচ অকস্মাৎ একটাই কথা মনে পড়ে
যে ঘরের তালা খুললাম, আমি তো আসলে একা সেই ঘরে”
[ক্রমশঃই ক্ষীণ হয়ে আসে মেয়েটির স্বর, ছেলেটির গলা শোনা যায়। ছেলেটিরই গলা তবু
তার নয় যেন। যেন অন্ধকার সত্যিই কামড়েছে তাকে হাঙরের চওড়া চোয়াল। যেন তার মৃত্যু
হয়নি তবু, নোনা জল রক্তের আমিষ আরকে আরও বেশি নোনা হয়ে বালিতে বালিতে ঝরে গেছে।
যেন তটভূমি জুড়ে অসংখ্য ঝিনুকের লাশ শান্ত ফুলের মত তাকিয়ে রয়েছে তার কবরের দিকে।
মেয়েটির নতমুখ আবছা আবার। ছেলেটিকে দেখা যায় জানলার পাশে। সময় মধ্যরাত, জানলার
ঐপাশে কিছু কলকাতা ল্যাম্পপোস্ট ছুঁয়ে জেগে আছে। যে রকম মৃতদের নিকটাত্মীয় কিছুটা
বাধ্য হয়ে জেগে থাকে হিম হিম খাট ছুঁয়ে চুল্লীর ব্যস্ত আগুনে। জানলার ঐপাশে কিছু
কলকাতা আর ট্রামের লাইন। ট্রামের লাইন আর ফাঁকা ফুটপাথ। ফুটপাথ, চারমাথা রাস্তার
মোড়, রঙচটা জেব্রা ক্রসিং। ছেলেটি চেয়ার থেকে ওঠে, পায়চারি করে। আবার ফেরত আসে
জানলার কাছে, বলে ওঠে, কিছুটা ক্লান্ত স্বরে যেন... ]
ছেলেটি : অস্তিত্বে জড়তা নেই
শুধু কিছু
ঘুণপোকা বেঁধে আছে বাসা
আমাদের
জীর্ণ গলিঘুঁজি
আমাদেরই
গভীর হতাশা জমে ভরে যায়
ঘুম ভেঙে দেখি ভোর হল তবুও ঘাসের গায়ে জমেনি শিশির।
এ সব আমারই কথা। তা হলেও খানিক বুঝেছো ভুল। ভুল বোঝা ভালো। কষ্ট বলতে আমি চাইনি কখনো। বলতে চেয়েছি শুধু সেটুকুই, একজন মানুষের যা থাকে বলার – ক্ষিদে পেলে ক্ষিদে আর ঘুম পেলে ঘুম। কষ্ট ভেবেছো যাকে আসলে তা কষ্টের স্মৃতি। পাতারা হলদে হয়ে গেছে, খাম ছেঁড়াখোঁড়া, অক্ষরে উইয়ের বাসা তবুও পুরোনো চিঠি, কোন দিন ডাকে এসেছিল।
মেয়েটি : তুমি শব্দের কারিগর। কত অনায়াসে কষ্টজনিত স্মৃতি থেকে
কষ্টকে দূরে ঠেলে দিলে।
ছেলেটি : দূরে নয়। দূরে ঠেলা যায় না বোধ হয়। আসলে কি জানো, ও রকম ভাবনারা
স্বস্তিতে রাখে ল্যাঙটোবেলার কোন বন্ধুর মতো। মনে করো পরীক্ষাহল, ইতিহাস, সাল ও
তারিখ ভুলে গেছি। পাশের বেঞ্চিটাতে বন্ধু বসেছে সেই ভরসার কোলেপিঠে কাগজে কলম
ঘষাঘষি।
[মঞ্চ অন্ধকার। ক্যাকোফোনি। এক দল ছেলে ও মেয়ের। এবং বাসের সাড়া, উদাসীন
কণ্ডাকটর, শীতাতপ মেপে চলা লাল গাড়ি, নাকউঁচু হর্ণ। সেলসম্যান, সুন্দরী, মোড়ের
পাগল। রুক্ষ দাড়ির নীচে ভেঙে পড়া গাল, ফুটপাথ, স্তিমিত হকার, পলিথিনে প্যান্টি ও
ব্রা, শাদা মোজা, তোয়ালে রুমাল। ক্রমশঃ আবছা হয় এই সব, দেখা যায় হাঁটছে ছেলেটি,
একা নয়, সাথে কেউ আছে। যদিও অপরজন মঞ্চে কোথাও নেই তবুও রয়েছে যেন ছেলেটির কোন এক
পাশে। ছেলেটি হাঁটতে থাকে ঢিমে তেতালায়, কথা বলে পাশে থাকা অপরের সাথে। অপরের
কথাগুলো কর্ণগোচর নয়, শুধু ছেলেটিকে শোনা যায় রাস্তার শব্দ পেরিয়ে। ]
ছেলেটি : আমার পকেট পুরো সাফ, বাসভাড়া বলে যেটুকু সরানো ছিল খানিক আগেই
তাকে উড়িয়ে দিয়েছি নিকোটিনে। হাঁটা ছাড়া অনন্যোপায়, তাই বলে এতটা হাঁটবি কেন তুই?
ছেলেটি : তাও ঠিক। কাল থেকে বন্ধ কলেজ। তোর কি আজই ট্রেন? আজকে রাতেই?
ছেলেটি : ফিরবি তো দশমী ডিঙিয়ে? কী করে পারিস বাবা পুজো ছেড়ে? আমি তো পাড়ার
পুজো ফেলে কিছুতেই পারবো না অন্য কোথাও যেতে ঘুরতে বেড়াতে।
ছেলেটি : ভাগ শালা। ওটা কিছু নয়। গেলবার ঠাকুর ভাসানে পাশাপাশি হেঁটেছিল,
ঐটুকু শুধু। এমনিতে রাস্তায় দেখা হলে চিনতে পারে না তবে যাই বল চোখদু'টো আকাশ
মাখানো। সত্যি বলছি তোকে, একবারই ঠেকে গিয়েছিল ওর আঙুলে আঙুল।
ছেলেটি : কী রকম! মুশকিল সে কথা বোঝানো। আচ্ছা, বলছি শোন - শিউলি ফুলের মত,
পুজোর পনেরো দিন আগে, আবছা গন্ধটুকু, একবার বুক ভরে নিলে রাত্রেও মনে হয় শাদা শাদা
মেঘ ভেসে আছে বড়লোকি সুইমিং পুলে। কিম্বা এমনও বলা যায়, খুব জ্বর, কপালে লেপ্টে
আছে জলপটি, ওডিকোলোনের গন্ধেরা। মোট কথা মনে আছে নেহাতই এক সেকেণ্ড আঙুলে আঙুল
ঠেকে গেল।
ছেলেটি : না না বেথুনের মেয়ে।
ছেলেটি : এক পাড়াতেই থাকি খবরাখবর কিছু রাখবো না এ আবার কোন আবদার!
[মেয়েটির মুখে আলো পড়ে, হাসছে সে গোপনতা দেখে। শেষমেশ কিছুই গোপন হয়ে থাকবে না
হয়তো সে জানে। মেয়েটির হাসি ছুঁয়ে, আকাশমাখানো চোখ ছুঁয়ে আলো ফেরে ছেলেটির দিকে।
ছেলেটির কথারা তখন চৌমাথা পার হয়ে নিবিড় গলিতে পদাতিক। ঘন্টি বাজিয়ে পাশ কেটে যায়
একা সাইকেল।]
ছেলেটি : বলিস কি! ডুবে ডুবে জল! নাম তার বলে ফেলো খোকা।
ছেলেটি : দাঁড়া দাঁড়া, নবীন বরণে এসে পাঁচশো মাইল গেয়েছিল? কাকে যেন নাম ধরে ডেকে
বলেছিল দাদা বলা হ্যাবিটেই নেই? হস্টেলে থাকে?
[কথারা এগোতে থাকে - টিউশনি, রাজনীতি, কলেজ, কমনরুম, ক্যান্টিন, ঘুগনি-পরোটা।
ফুটবল, সল্টলেক, পরীক্ষা, পূজাবার্ষিকী। বন্ধুর ভাঙা প্রেম, ম্যাডামের খোঁপাবাঁধা
চুল, এডাল্ট সিনেমা নুন শোতে, মারামারি, জিনসের রঙ এবং কলেজ স্ট্রীট এবং
পুরোনো বই এবং এবং... মঞ্চ ক্রমেই নিভে আসে।
আবার জ্বলবে আলো, মেয়েটিকে শোনা যাবে ফের। যেখানে থেমেছে কথা সেখান থেকেই শুরু
হবে। বাস্তবে এ রকম ঘটে না তেমন তবে গল্পে তো কত কিছু হয়।]
মেয়েটি : বরাবর স্বস্তিই চেয়েছো দেখেছি। তাই তুমি, তোমার সে চিলেকোঠা ঘর,
আগাগোড়া ঠাসাঠাসি সিন্দুকে, চোরাকুঠুরিতে। উত্তর পারবে না দিতে এমন প্রশ্ন যদি
আসে, অমনি লুকোতে চাও চমক লাগানো কোন গোলকধাঁধায়। এমন কি, ভালোবাসো কি না জানতে
চাইলে আঁকো শব্দের দেউড়ি, খিলান।
ছেলেটি : এ তোমার অন্যায়। এ তোমার অন্যায় ভারি। ভালোবাসা কত বার কত ভাবে
বলা হলে সত্যি শোনায়? ভালোবাসা বলা যায় বুঝি? বলা যায় কাল রাতে এক ফালি মেঘ কোন
আহ্লাদে ছিলো চাঁদকে জড়িয়ে? কবেকার বৃষ্টির স্মৃতি দেওয়ালের লোহার পাঁজরে গভীর
বসতি করে কেন বা খসাতে চায় চুনরঙ, বালি, পলেস্তারা, বলা যায় না কি? যায় যদি, আমিও
বলেছি তবে, বহুবার, বিভিন্নভাবে।
মেয়েটি : উত্তর দিলে না তবুও।
ছেলেটি : উত্তর চাও? সত্যি কি উত্তর চাও? দয়া করে একবার পিছনে তাকিয়ে দেখো
ফেলে আসা শূন্য দশকে। দেখতে পাচ্ছো তুমি? ঊনিশশো নিরানব্বই, শনিবার, শহরের আস্তিনে
জমাট বাঁধছে ক্রমে শীতের কমলাঘ্রাণটুকু...
[হয়তো বা নভেম্বরবেলা। রাস্তায় সারি সারি ঊলেনমানুষ আলগোছে ঝেড়ে ফেলে
ন্যাপথলিনের চিহ্নকে। ছেলেটিকে দেখা যায়, বড় আনচান, উঁকিঝুঁকি ঘড়ির কাঁটায়। চোখ
থেকে চশমা নামিয়ে হাতে নেয়, জামা দিয়ে মোছে... ঘড়ি দ্যাখে... ছটফট... ঘড়ি
দ্যাখে... জামা দিয়ে চশমাকে মোছে... ল্যাম্পপোস্টের নীচে ধীরে ধীরে ছায়া ফ্যালে
কুয়াশারুমাল।
মঞ্চের অন্য কোনায় গমগমে জেগে ওঠে চেনা ইস্টিশান। হুড়োহুড়ি, ব্যাগপত্তর, ভিনভাষী
লালজামা কুলি, দূরপাল্লার ট্রেন, কালো কোট টিকিটচেকার। বিস্কুট, পাঁউরুটি-কলা,
ফোলানো বালিশ আর স্ট্র্যাপবাঁধা জলের বোতল। আত্মীয়, পরিজন, উপদেশ, সাবধানবাণী।
মেয়েটি অনেকদূর যাবে, মায়ের আঁচল জলে ভেজা, বাবা গম্ভীর। মেয়েটি খানিক
ভ্যাবাচ্যাকা, কাউকে খুঁজছে কি সে ভিড়ের আদলে?
ছেলেটির সেই জানলাটা। জানলার ঐপাশে কিছু কলকাতা আর ট্রামের লাইন। রাস্তায় গুটিশুটি
তিনটে কুকুর, বেওয়ারিশ চপ্পল, গুপ্তরোগের পোস্টার। ছেলেটি লিখতে চায় ভীষণ ধারালো
কিছু কথা, যেমন কসাই দেয় গলার নলিতে সরু টান আর তারপর রক্ত চুঁইয়ে পড়ে বাঁকানো
ছুরির আবদারে। পারে না লিখতে কিছু, আক্রোশে, তীক্ষ্ণ বিষাদে জানলার গায়ে ঘুষি
মারে। জানলার ওপারে তখন ট্রামের লাইন আর ফাঁকা ফুটপাথ। ফুটপাথ, চারমাথা রাস্তার
মোড়, রঙচটা জেব্রা ক্রসিং।
মেয়েটি খবর পায়, কোনও চিঠি সেদিনও আসেনি তার নামে।
এইভাবে গল্প এগোতে থাকে। পাশাপাশি ছেলেটি ও মেয়েটি দু'জনে এক সাথে চোখ রাখে ফেলে
আসা শূন্য দশকে। পাশাপাশি, কাছাকাছি ঘেঁষে। যেন ওরা দর্শক, সাজানো গোছানো সভাঘরে।
যেন ওরা গল্পের কেউ নয়, যেন ওরা ঘোর বাস্তব। যেন ওরা... যেন... ওরা... মঞ্চ ক্রমেই
নিভে আসে ]
In : কাব্য-নাট্য