আর্তুর র‍্যাঁবো (১৮৫৪-১৮৮৮)-র ইল্যুমিনেশন্স-এর বাংলা করেছিলেন কবি তুষার চৌধুরী (১৯৪৯-২০১১)। ১৯৭৯ তে তাঁর ‘অলীক কুকাব্য রঙ্গে’ থেকেই তাঁর কবিতা-যাত্রা শুরু, আশ্চর্য সেই ভ্রমণপথ। অনুবাদের দ্বিতীয় এই বইটিতে তাঁর অনবদ্য বাংলাভাষাবোধের সঙ্গে মিলিয়েছিলেন অগাধ পরিশ্রম। কিছুটা মূল ফরাসি ও অনেকটা ইংরিজি অনুবাদের সাহায্য নিয়ে কাজটি করে রেখেছিলেন কয়েক বছর ধরে। ২০০৫-এ র‍্যাঁবোর বিষয়ে আলিয়ঁস ফ্রন্সেজের এক অনুষ্ঠান-প্রদর্শনী-আলোচনাসভা উপলক্ষে বই হিসেবে প্রকাশ পায় ইল্যুমিনেশন্স। সে পুস্তক প্রকাশ অনুষ্ঠানের ছবিও রইল সঙ্গে।

 

তার থেকেই পাঠ করলাম কয়েকটি কবিতা।  

                                            -যশোধরা রায়চৌধুরী


রাজকীয়তা

এক সুন্দর সকালে খুব শান্ত লোকেদের এলাকায়, চমৎকার এক পুরুষ আর এক নারী চৌমাথায় চিৎকার করছিল। বন্ধুগণ, আমি চাই যে ও রাণী হোক। আমি রাণী হতে চাই! মেয়েটি হাসছিল আর কেঁপে কেঁপে উঠছিল। পুরুষটি প্রত্যাদেশের বন্ধুদের বলছিল এক সমাপ্ত বিচারের কথা।  ওরা এ ওর গায়ে মূর্ছা যাচ্ছিল।


বস্তুত ওরা ছিল একটা পুরো সকালের রাজারাণী, যখন টকটকে লাল পর্দা তোলা হল বাড়িগুলোর গায়ে এবং পুরো বিকেলের, যখন ওরা পামগাছের বাগানগুলোর দিকটাতে এগিয়ে গেল।

 

পাড়ি

দেখা হল অনেক। দৃশ্য আকাশ জুড়ে দেখা দিল।


পাওয়া গেল অনেক। মহানগরীর শোরগোল, সন্ধেবেলা এবং রোদে এবং সর্বক্ষণ।


জানা হল অনেক। জীবনের যত কানাগলি। ও শোরগোল আর দৃশ্যাবলী!


নতুন স্নেহ আর নতুন কোলাহলে পাড়ি!


একটি যুক্তির প্রতি

মাদলে তোমার আঙুলের একটি টোকা সব শব্দকে মুক্তি দেয় আর শুরু করে নতুন ঐকতান।


তোমার একটি পদক্ষেপ আসলে নতুন মানুষদের  সৈন্যদলে যোগদান আর তাদের এগিয়ে যাবার আদেশ।


তোমার মাথা পাশ ফেরে নতুন ভালোবাসা! তোমার মাথা পেছনে ঘোরে নতুন ভালোবাসা!


আমাদের কপাল ফেরাও, ধ্বংস করো মারী, সময়ের সাথে শুরু করে।  এই শিশুগুলো তোমাকে শোনায় গান, আমাদের কামনার সারাৎসারটুকু তুলে ধরো, যেখানে পারো। দয়া করো ওদের।


চিরকালীনতার থেকে পৌঁছে, সর্বত্র চলে যাবে তুমি।


প্রদর্শনী

খুব বলশালী বদমাশ। ওদের কেউ কেউ কাজে লাগিয়েছে তোমার জগৎ। প্রয়োজন ছাড়াই, আর তাদের উজ্জ্বল প্রতিভা ও তোমার বিবেকবুদ্ধি সম্বন্ধে তাদের জ্ঞানগম্যি খাটাতে এতটুকু বাধ্য না হয়েই। কী পরিণত মানুষজন! তাদের চোখ গ্রীষ্মরাতের মত হতবুদ্ধি, লাল আর কালো, তেরঙা, সুবর্ণনক্ষত্রে সীবিত ইস্পাত; তাদের চেহারা বিকৃত, মলিন, ফ্যাকাশে, দগ্ধ; ফিচেল ঘড়ঘড়ানিতে! চীরবাসের নিষ্ঠুর চলনভঙ্গি!  ---কিছু কিছু তরুণ আছে, ---প্রেমপ্রবণ সদ্যকিশোরকে ওরা কী চোখে দেখবে? ---ভীতিপ্রবণ কন্ঠস্বর আর কিছু কৌশলের অধিকারী।  বিরক্তিকর বিলাসী সাজে সাজিয়ে ওদের শহরে পাঠানো হয়েছে দাপিয়ে বেড়াতে।


ও ক্রুদ্ধ মুখব্যাদানের হিংস্রতম স্বর্গোদ্যান! তোমার ফকিরদের আর অন্যসব নাটুকে ভাঁড়ামির সাথে কোন তুলনা হয় নয়। দুঃস্বপ্নের স্বাদ দিয়ে সুবিধে মত তৈরি পোশাক পরে সে অভিনয় করে শোকের, ইতিহাস বা ধর্ম কখনো হয়নি এমন আধ্যাত্মিক উপদেবতা ও দস্যুদের বিয়োগান্ত নাটকের। চিনা, হটেনটট, বোহেমিয়ান, হাবা, হায়েনা, মোলক, পুরনো পাগলামি, অশুভ দানো ও পাশবিক হাবভাব ও আদরের সাথে ওরা মেশায় জনপ্রিয় মাতৃসুলভ কৌশল। ওরা বিবিধ নাটক আর লোকগীতির ব্যাখ্যা দেবে ( ভাল মেয়ে জাতীয় গানের)। ওস্তাদ বাজিকর , ওরা বদলে দেয় স্থান ও পাত্রপাত্রী আর প্রয়োগ করে সম্মোহক রঙ্গমঞ্চ।  চোখ জ্বলজ্বল করে, রক্ত গান গায়, হাড় চওড়া হয়, অশ্রু আর লাল ঢেউ কুলকুল করে  বয়ে যায়; ওদের গালিগালাজ বা ওদের সন্ত্রাস টেঁকে এক মিনিট বা পুরো মাস।


শুধু আমারই রয়েছে এই জংলি প্রদর্শনীর চাবি।