গদ্যেও আগুনের বাসিন্দা / রাহুল দাশগুপ্ত

November 27, 2011
গদ্যেও আগুনের বাসিন্দা / রাহুল দাশগুপ্ত

প্রবন্ধ সংগ্রহ : পবিত্র মুখোপাধ্যায়

 


কবিতা সেই জটিল শিল্পকর্ম, যার স্বরূপ-সন্ধান করা মোটেই সহজ কাজ নয়। কবিরা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা কবিতা লিখে যান, কিন্তু সেই রহস্যময় সত্তার রহস্যের গভীরে সহজে ঢুকতে চান না। যারা ঢোকেন, তারা লোকোত্তর প্রতিভা নিয়েই ঢোকেন, নইলে এই গোলোকধাঁধায় বিভ্রান্ত হওয়া অনিবার্য। টি এস এলিয়ট পেরেছিলেন, অক্তাভিও পাজ পেরেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ পেরেছেন, বুদ্ধদেব বসু বা শঙ্খ ঘোষ পেরেছেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন 'কবিতার জন্ম' নামক অসাধারণ বিশ্লেষণাত্মক গদ্যটি। পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের 'প্রবন্ধ সংগ্রহ' কবিতার আত্মার স্বরূপ-উদ্ঘাটনে রচিত এমন এক গ্রন্থ, যা অনায়াসেই এই ধারায় একটি মাইলস্টোন হিসাবে স্বীকৃত হতে পারে। আধুনিক কবিতার পাঠকদের কাছে কবিতা সংক্রান্ত এই ডিসকোর্সটি অবশ্যপাঠ্য হওয়া উচিত বলেই মনে হয়।

 

দীর্ঘ চার দশক ধরে রচিত এই গ্রন্থের বিভিন্ন প্রবন্ধে পবিত্র কবিতাকে তার নিজের মতো করে আপাদমস্তক বুঝে নিতে চেয়েছেন। তিনি আলোচনা করেছেন কবিতা, দীর্ঘকবিতা, মহাকবিতা, লঘু কবিতা, কবিতার সময়, বাস্তবতা, চিত্রকল্প, ভাষা, ছন্দ, আঙ্গিক, পুরাণ-প্রতিমা, গদ্যের সঙ্গে তার পার্থক্য, কবির কাজ ও স্বভাবকবির বিশ্বের তফাৎ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তবে গোটা বইটি মোটামুটি চারটি মূল প্রশ্নকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। প্রথম প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই, কবিতা কী? কখন এবং কীভাবে গড়ে ওঠে কবিতা? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো, কবিতা কোন শর্তে ও পরিস্থিতিতে দীর্ঘকবিতা হয়ে উঠতে চায়? তৃতীয় প্রশ্ন, লঘু, হালকা পদ্য কেন লেখা হয়, তার বিচ্যুতির চেহারা কতরকম হতে পারে এবং তার জনপ্রিয়তার কারণ কী? চতুর্থ প্রশ্ন, কীভাবে একজন পাঠক ওইসব লঘু, হালকা পদ্যের থেকে প্রকৃত কবিকে শনাক্ত ও বিচ্ছিন্ন করে নিতে পারেন? পবিত্র নিজের মতো করে এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে চেয়েছেন।

 

প্রথম প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনাকালে পবিত্র বলেছেন, কবিকে হয়ে উঠতে হবে উৎকৃষ্ট এক চিত্তের অধিকারী। আবহমান ইতিহাসের অভিজ্ঞতায় অবগাহন করেছে, সমবেত মানুষের সাধনার সারাৎসার আত্মসাৎ করেছে, এরকম ঋদ্ধ, গ্রহণোন্মুখ, সংশয়ী, সংবেদনশীল চিত্তের চেতনার সারাৎসারই কবিতা, যে চেতনায় থাকে প্রজ্ঞার স্বচ্ছ আবরণ। কবির অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হতে থাকে স্মৃতিতে আর থাকে ইতস্তত ছড়ানো। তখন প্রয়োজন হয়ে পড়ে অভিজ্ঞতার সংহতি। যে কবির অভিজ্ঞতা ব্যাপ্ত ও গভীর, তার কবিতায় ব্যবহৃত শব্দও বহুকৌণিক তাৎপর্যে চিত্রায়িত হয়। তাবৎ অভিজ্ঞতার ভাস্কর্য আজকের কবিতা, বহুসুরের জটিল আলাপ, বিচিত্র উপলব্ধির অ্যালকেমি, মৌহূর্তিক উপলব্ধির নির্মিতিমাত্র নয়। যার নির্মাণে বর্জন করতে হবে শব্দের শুচিবায়ুতাকে, গ্রহণ করতে হবে চলমান সময়ের বিদ্যুৎপৃষ্ট অভিজ্ঞতাকে, শব্দের সীমিত সামর্থ্যে ফুটিয়ে তুলতে হবে অন্তর্জাত বোধবিন্দু ও আত্মমন্থনের সারাৎসার। ব্যক্তির অখণ্ড ব্রহ্মত্ব স্বীকার করে নিয়ে এক একটি ক্ষুদ্রবিশ্বের অচেতন মনের বোধ-প্রবাহকে ভরে রাখতে হবে শব্দের শূন্যপাত্রে।

 

প্রাবন্ধিকদের মতে, দণ্ডিত হয়ে জীবনের শোভা দেখে যাওয়াই কবির নিয়তি। কবির কাজ জগৎকে অনুভব করা, বদলানো তার কাজ নয়। কবি বিচারক নন, মানুষকে তিনি দেখেন ভালোমন্দে, পাপেপূণ্যে বেদনাদীর্ণ অসম্পূর্ণ সত্তার প্রতীক হিসাবে। ক্ষুধায়, পিপাসায়, ঈর্ষায়, উচ্ছ্বাসে, হতাশায়, উদ্দীপনায় উদ্বেলিত মানুষই যেহেতু আজকের সবচাইতে এবং একমাত্র আলোচ্য, তাই মানবীয় তাৎপর্যমণ্ডিত অভিজ্ঞতা ও তার সারবস্তু কবিতা ও শিল্পের প্রাণভূমি। মানুষের উত্থানপতনসংকুল খণ্ডিত জীবনের সূক্ষ্ম, অনুসূক্ষ্ম অনুভূতির ইতিহাসই শিল্পের ইতিহাস। ইতিহাসবোধ খুব পরিষ্কারভাবেই থাকা চাই কবির। অরিজিনাল হতে হলে ঐতিহ‌্যের স্বীকরণ জরুরি। চাই অতিসূক্ষ্ম আহ্বানে সাড়া দেওয়ার যোগ্য সংবেদনশীলতা, মন যোগীর মতো স্থির রেখে ভাবতে বসা। সে হবে একদিকে দারুণভাবে জীবনাসক্ত, অন্যদিকে তার মধ্যে থাকবে একজন সন্ন্যাসীর উদাসীনতা। সবকিছুর প্রতিই তার উৎসাহ, আকর্ষণ, আবার অনেক কিছুর প্রতি তার উৎসাহহীনতাও থাকবে, আর তা থাকবে ঘটনা বা বস্তুর অতিসাধারণ তাৎপর্যহীনতার জন্যে। অন্তর্জগতের তাৎপর্যময় অন্বেষণই শিল্প। শুধু নিজের অরোগ, অক্লিষ্ট জীবনই নয়, চাই শিকড়ে জড়ানো মাটির নিরাময় উর্বরতা। অতৃপ্তি থেকেই শিল্পের জন্ম, বোধের তাড়ণায় শিল্পের সমস্ত আয়োজন, কোনও অজ্ঞাত মুহূর্তে দীর্ঘদিনের য়ন্ত্রণাক্ত উপলব্ধির বিস্ফোরণ ঘটে, কিন্তু এই বিস্ফোরণ ধ্বংসাত্মক নয়, বরং দীর্ঘদিনের রক্তক্ষরণের বিন্দু বিন্দু রক্ত জমে গোলাপ হয়ে ফোটে বলেই তা হয়ে ওঠে শিল্প। প্রকৃত কবির সৃষ্টি প্রক্রিয়াটা ব্যাপক অনুপ্রেরণার ফল, দীর্ঘদিনের গ্রস্ত থাকার পরিণতি।

 

উদাহরণ হিসাবে বিভিন্ন কবির কবিতা ও তাদের সাফল্য-ব্যর্থতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পবিত্র লিখেছেন, সুকান্ত বহু মানুষের লোকায়ত দুঃখ-যন্ত্রণা-আকাঙ্ক্ষা-উদ্দীপনার সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত প্রশ্নগুলিকে মিলিয়ে দেখতে পেরেছিলেন বলেই অকৃত্রিম সারল্য তাকে একধরনের সিদ্ধির দিকে নিয়ে গেছে। তার কাছে কবিতা শুধু ব্যক্তির অস্তিত্ব ও তার পরিত্রাণের পারগেটিভ নয়, অসহায় মানুষের আত্মরক্ষার অস্ত্র। কিন্তু তিনি জানতেন না, শিল্প অকৃত্রিম হলেই সার্থক হয় না, তার সার্থকতা নির্মাণে, কৃত্রিমতার দ্বারস্থ হতে হয় নির্মাণলগ্নে। সমর সেনের ভাষা মানুষের মুখের হলেও উপলব্ধির সারাৎসার প্রকাশে তিনি অন্তর্গত কাব্যধর্মকে বর্জন করেছেন। কবিতা লিখতে গিয়ে তার চরিত্রধর্ম বিস্মৃত হওয়া এই কবির চরমতম ভ্রান্তি। বিষ্ণু দে'র কবিতায় আছে স্বকাল, স্বকীয় চৈতন্যের শতসহস্র প্রশ্নের স্বভাবিক উপস্থিতি। তবে এই গ্রন্থে আগাগোড়া যার অদৃশ্য সম্মোহন ছড়িয়ে আছে, তিনি জীবনানন্দ দাশ। লেখকের মতে, জীবনানন্দই সেই কবি, যার উচ্চারণ অমোঘ, অপ্রচলিত দেশজ শব্দের ব্যবহার বহুল, তার কবিতায় সর্বদাই কোনও অন্তর্গত দুর্মর উপলব্ধির চাপ কাজ করে এবং শেষ পর্যন্ত কোনও না কোনও বোধে পৌঁছে দেয় অনায়াসে।

 

দ্বিতীয় প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনাকালে কবি বলেছেন, একটিমাত্র মুডকে লিরিক সংহতিতে বাঁধে। দীর্ঘকবিতাই আত্মাবিষ্কারের সহায়ক, কবি যে আয়নায় প্রতিফলিত প্রতিবিম্ব দেখে চিনতে পারবে আত্মার রহস্য, সেইতো তার বহুচেনা বিস্ময়। মানুষের মন একমুখিন নয় কখনও, তার চেতনার স্তরেও থাকে নিশ্চেতনার, নির্জ্ঞানের আলো-অন্ধকারের খেলা। মিশ্র জটিল চৈতন্যের প্রকাশ কবিতার কাছে দাবি করা হয় যদি, তার যোগ্য মাধ্যম অবশ্যই দীর্ঘকবিতা। অসংখ্য পরস্পরবিরোধী ও পরিপূরক, অনৈক্যের মধ্যে ঐক্যসন্ধানী মহাকবিতার বহুস্তরবিন্যস্ত জটিল ল্যাবিরিনথ রচনার জন্য প্রয়োজন সর্বোত্তম কল্পনাপ্রতিভার, বহুমুখী অভিজ্ঞতার সঙ্গে অতৃপ্ত প্রশ্নদীর্ণ আত্মার জাগরণ, সর্বোপরি দুর্লভ সৃষ্টিকালীন প্রেরণা। একটানা দুঃখকষ্টে পরিপূর্ণ জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিপ্রবাহকে খণ্ড কবিতায় ধরে রাখা যায় না, বহুব্যাপ্ত জীবনচেতনাকে একটি সংক্ষিপ্ত কবিতায় প্রকাশ একেবারেই অসম্ভব, চাই এমন একটা মাধ্যম যেখানে চেতনাপ্রবাহের সূত্রে গ্রথিত ধ্বংসাত্মক ও গঠনমূলক তাবৎ চৈতন্য, অনুভব ও অভিজ্ঞতাকে কখনও সোচ্চারভাবে, কখনও গভীর সংবেদনায় ডুবে গিয়ে প্রকাশ করা যায়।

 

প্রাবন্ধিকের মতে, দীর্ঘকবিতায় পুরাণ-কাঠামোকে আশ্রয় করে অনেকসময় সমসময়ের, মানুষের বিভ্রান্তি, বিষাদগ্রস্ত চেতনাকে উন্মোচন করা হয়। মিথ হল প্রতিমার কাঠামো, সে এলিয়ে পড়তে দেয় না, কল্পনার অবাধ উৎসারকে সংযত করে। যদি ওই প্রত্ন-প্রতিমার মধ্যে থাকে অনন্ত সম্ভাবনা, তবে তা বিশেষ একটি যুগের সীমা-চৌহদ্দি ছাড়িয়ে যুগান্তরের মানুষের কাছে বেদনার ও উৎসাহের উৎস ও প্রেরণা হয়ে ওঠে, নয়তো নিছকই একটি শিক্ষিত পদ্য হিসাবে তার মূল্য ফুরিয়ে যায়। আমাদের লৌকিক কাব্য, পুরাণ, মহাকাব্যগুলি ভারতীয় জীবনে কখনই অতীতের গালগল্প হয়ে টিঁকে নেই, তাদের আছে দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সজীব অস্তিত্ব। তারা সব যুগের রাষ্ট্রবিপ্লব, ধর্মচেতনার, সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে গ্রথিত থেকে নতুন নতুন অর্থ-সম্বন্ধ সৃষ্টি করে এসেছে। ঘটনা হলো, একটি অনতিদীর্ঘ কবিতাও মহাকবিতার চরিত্র বহন করতে পারে, যদি তাতে ব্যাপক চিন্তা ও চেতনার আভাস থাকে, আবার অজস্র পংক্তি-সমণ্বিত কবিতাও একমাত্রিকতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না, তার ওই প্রতিশ্রুতির অভাবের কারণে। লেখকের মতে, ইদানীংকালের বাংলা সাহিত্যে দীর্ঘকবিতা লেখার যে রেওয়াজ, তার অধিকাংশ লিরিকের দীর্ঘায়ত একটা চেহারামাত্র।

 

তৃতীয় প্রশ্নটি নিয়ে বলতে গিয়ে পবিত্র লিখেছেন, ইদানীংকালে পাঠকের একাংশ মনে করেন, স্বভাবের মধ্যে কবিত্ব যার অফুরন্ত, যার কবিতার উৎসে সবসময় থাকে স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ এবং সেই আবেগের মোক্ষণ ঘটে সরলরেখায়, তিনিই কবি। অনুভূতিকে উপলব্ধির স্তরে নিয়ে যেতে স্বভাবতই তাদের অনীহা প্রকাশ পায়। স্বভাবকবিদের দায় শুধু স্বীয় ভাবের অবাধ প্রকাশে, ব্যক্তিত্বের বন্ধনহীন মুক্তিতে। এদের মনোজগৎ অগভীর দিঘির মতন, দেখাটাই উপরিতলের, ছন্দ-মিলের সোজা রাস্তায় চলাতেই কর্তব্য ফুরোয়, পঠন-পাঠনের স্থৈর্য, অভিজ্ঞতার কেলাসন ও জীবন সম্পর্কে একটি বৈজ্ঞানিক স্বচ্ছ দৃষ্টি অর্জন, এ সবের প্রতি তাদের কোনও আগ্রহ নেই। একজন স্রষ্টাকে স্বভাব দ্বারা চালিত হলে চলে না। তার অর্জন চলতে থাকে আমৃত্যু। যে পারে না স্বভাবকে শাসনে বাঁধতে, তার কবিতা শৃঙ্খলাহীন অবাধ, উন্মুক্ত উচ্চারণ মাত্র। যেখানে কবির উচ্চারণের মধ্যে লঘুতা প্রকাশ পায়, বিষয় নির্বাচনে তুচ্ছ ঘটনা প্রধান হয়ে ওঠে, যে কবিতায় শব্দ কোনও সুদূরবাহী তাৎপর্যে জ্বলে ওঠে না, গভীর উপলব্ধির চাপে সংযত নির্মাণ পায় না, যা মিলবিন্যাস ও শব্দব্যবহারের চাতুর্যে উপরিতলে রয়ে যায়, তা-ই হালকা কবিতা। তারুণ্য যখন স্থির, কোনও প্রাজ্ঞ উপলব্ধি আয়ত্ত করতে অক্ষম, সেখানে এই লঘুচালের কবিতাকেই অনুকরণে আপন শক্তি নিঃশেষিত করে ফেলে। স্বভাবোক্তিকে কবিতার চুড়িদার পরিয়ে বাবু সাজিয়ে জাতে তোলার অশিক্ষা এদেশে বাহবা পায় অনায়াসেই।

 

চতুর্থ প্রশ্নটি প্রসঙ্গে পবিত্র লিখেছেন, কেউ যদি কবিতাকে সস্নেহে 'পদ্য' বলে চিহ্নিত করেন, বোঝা যায়, শিল্পবোধের অস্বচ্ছতাই এর জন্য দায়ী। নিরন্তর পঠনপাঠন ব্যতিরেকে মানসিক প্রস্তুতি-চর্চা অসম্ভব। পাঠের পরিধির বিস্তার যেমন প্রয়োজন, তেমনই যে লেখা ব্যক্তিগত উপলব্ধিকে নাড়া দেয়, তাকে বেশি প্রয়োজনীয় ভাবতে শেখাও জরুরি। একবার পড়লেই যা ভালোগোছের প্রশংসা আদায় করে নেয়, ভাবায় না, ভাবতে শেখায় না, জাগিয়ে তোলে না কৌতুহল, বারবার পাঠে উৎকণ্ঠিত করে তোলে না, তেমন রচনাকে কবিতার সংজ্ঞায় চিহ্নিত করা যায় না। কারণ, তখন কবিতা থাকে পংক্তিগঠনের সামঞ্জস্যের, মিলের সহজ বিন্যাসের, বর্ণনায় যথার্থতার স্বভাবোক্তির স্তরে, যা পদ্যেরই সঠিক চরিত্র, কবিতা নয় তা। সহজপাচ্য লঘু পদ্যের কবিয়ালেরা মেধাহীন অনুভূতিহীন শব্দচর্চার যান্ত্রিক অভ্যেস থেকে ভুরি ভুরি পদ্যের জন্ম দেয়। যেখানে নিজের তাগিদই প্রধান, দেশ জাতি সময় কোনও প্রেরণা নয়, তার রসদ অচিরেই যায় ফুরিয়ে। মহাশ্বেতা দেবীর মতোই পবিত্রও মনে করেন, নানা সমস্যার কন্টকশয্যায় শুয়ে থাকতে থাকতে ছটফট করছে যে দেশের মানুষ, যে কবি তাদের উপেক্ষা করে, দেশের মানুষের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে আত্মসর্বস্ব ব্যক্তিত্ববাদকেই সর্বাধিক মূল্যবান মনে করেন, বিশাল মানুষের কর্মিষ্ঠ জীবনের গোপন, গভীর হাজার সমস্যার প্রতীক না হয়ে ব্যক্তিগত হতাশা-বিষাদ-দীনতা-ক্লান্তি-আনন্দকেই প্রাধান্য দেন, তার রচনা কখনও স্থায়ী হতে পারে না।

 

এইভাবেই গোটা বইতে পবিত্র মুখোপাধ্যায় কবি ও কবিতা বিষয়ে একটি ডিসকোর্স রচনা করেছেন। জীবনানন্দ দাশ ও বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই যথার্থ উত্তরাধিকার, বিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের মহৎ কবির সারাজীবনের উপলব্ধির এই জরুরি দলিলটি ভবিষ্যতের কবিতা-পাঠকের কাছে কবিতা সংক্রান্ত বহু বিভ্রান্তি মোচন করে দিতে পারে অব্যর্থ আলোর সন্ধান।

 

বার্গম্যান, আপনি : পরিমল ভট্টাচার্য / অরিজিৎ মুখোপাধ্যায়

October 21, 2011
বার্গম্যান, আপনি
অনুবাদ /গ্রন্থনা /ভাষ্য : পরিমল ভট্টাচার্য
প্রকাশক : অবভাস
       গড়িয়া স্টেশন রোড, কলকাতা-৮৪

"সম্প্রতি বার্গম্যানের মৃত্যুর পর বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে, ইন্টারনেটে, ব্লগ সাইটে সা...

Continue reading...
 

জেব্রামাস্টার : হিমায়িত সঙ্গীতের আর্কিটেকচার / মৃদুল মাহবুব

September 23, 2011

Always be a poet, even in prose. ~ Charles Baudelaire

 

মজনু শাহের  “জেব্রামাস্টার’’, চতুর্থ কবিতাগ্রন্থ অক্ষরবৃত্তের ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা, গদ্যকবিতার ঈসথেটিকাল এন্ড।

সমকালীন কবিতার যে লাইট-ইয়ার তার দৈর্ঘ্য ১৯৮০-২০১০ খৃষ...

Continue reading...
 

Recent Posts